গার্মেন্টস শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠনের মাধ্যমে নূন্যতম মজুরী ২৪০০০/- টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা, বাসস্থান সংস্থান, রেশনিং ব্যবস্থা ও চাকুরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দাবীতে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন,
‘আপনাদের সবাইকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এর থেকে পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা আনাচ্ছি। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন জনাব
আপনারা জানেন বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়েই চলেছে, যার সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমার পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা। এই শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠনের মাধ্যমে নুন্যতম মজুরী ২৪০০০/- টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা, বাসস্থান সংস্থান, রেশনিং ব্যবস্থা ও চাকুরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।
আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। বর্তমান নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারনে জীবন যাত্রার মান একেবারেই নিম্নমুখী। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য মাসিক নিম্নতম মজুরী প্রথমবার ৮,০০০/- নির্ধারন করেছে যাহা পূর্বে ছি ৫,৩০০/- টাকা। অনেক গার্মেন্টস শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলি কমপক্ষে ২০,০০০/- দাবী করে আসছিল। যদি শ্রমিকরা দাবি করে যে এই বৃদ্ধি বর্ধিত চলমান জীবনযাত্রার খরচ মেলানোর জন্য খুবই সামান্য। নেতৃবৃন্দ বলেন দেশের সবচাইতে বড় শিল্প সেক্টর গার্মেন্টস এর শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরী নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ বছর আগে।
এই ৫ বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, বাড়ি ভাড়া, এবং জীবন-যাত্রার ব্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে কিন্তু এ সেক্টরে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য নতুন ভাবে মজুরী নির্ধারন করা হয় নাই।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগন
সিপিডির তথ্যানুযায়ী, ঢাকার কেন্দ্রস্থলে বসবাসরত একজন ব্যক্তির মাসিক খাবার খরচ ৫ হাজার ৩৩৯ টাকা। তারজনের একটি পরিবারের ক্ষেত্রে এই খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ৩৫৮ টাকা। যদি কোনো পরিবার পুরো মাসে একবারও মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মুরগি না খায় তাহলেও খরচ ৮ হাজার ১০৬ টাকা। এ খরচের মধ্যে খাবারের সঙ্গে এক কক্ষের ঘরভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল, চিকিৎসা ব্যয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্য ক্রয়, সন্তানের পড়ালেখার খরচ, যাতায়াত, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের বিল আছে। গণপরিবহনের ভাড়াও বেড়েছে। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাক শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমে যাচ্ছে। তাতে বর্তমান মজুরিতে শ্রমিকদের জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা ক হওয়াতে তারা তাদের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে পারছে না যার ফলে অপুষ্টিহীনতায় ভুগে বয়স হওয়ার আগেই কাজ ছেড়ে দিতে হচ্ছে এতে করে সে শ্রমিক পরিবার, সমাজ ও তথাপি দেশের বোঝা হয়ে যাচ্ছে যার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়ছে।
আমরা জানি নিম্নতম মজুরি কাঠামোর নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর শ্রমিকেরা মূল মজুরি ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করেন। মালিকেরা। অথচ তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তাতে জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি:দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এদিকে গত ৬ আগস্ট থেকে জ্বালানি তেলের দাম ৪২-৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। তারপর নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম আরেক দফা বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের নগর আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণ জরিপে একজন মানুষের পড় খাবার ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেই খাদ্যতালিকার মধ্য থেকে সাধারণ ২০টি খাবারের নাম বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে হিসাব করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) চার পরিবারের মাসিক খরচের হিসাবটি দাঁড় করিয়েছে। এ ক্ষেত্রে গত ৩০ মে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবির পণ্যমূল্য বিবেচনায় নিয়েছে তারা।
গত জুনের শুরু দিকে মজুরি বাড়াতে আন্দোলনে নামেন ঢাকার বিভিন্ন কারখানার পোশাক শ্রমিকরা। তখন আন্দোলন থামাতে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে টানা দুই দিন ত্রিপক্ষীয় সভা হয়। সেই সভা থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনের আশ্বাস দেওয়া হয়। তারপর দুই মাস পার হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তৈরি পোশাক খাতে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হয়। সেই কাঠামোতে ন্যূনতম মজুরি ছিল ৮ হাজার টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস (বিলস) এর গবেষনায় ঢাকা এবং চট্টগ্রামের ৪৫৭ জন পোশাক শিল্পের শ্রমিক, ৬ জন মালিক, ৫ জন ম্যানেজার ও ৫ জন সুপারভাইজার এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান গুলির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে জীবন যাত্রার মান (বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচ, চিকিৎসার খরচ ও অন্যান্য নিত্য নৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় খরচের দিকটি বিবেচনায় রেখে এ সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া যায় যে, শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী ২৪,০০০/- টাকা হতে হবে। সর্বোপরি শ্রমিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবন মানের কথা বিবেচনা করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য অনতিবিলম্বে নতুন মজুরী বোর্ড। গঠন করে শ্রমিকদরে জীবন-যাপন উপযোগী মজুরী নির্ধারনের জন্য সরকারকে নিকট দাবী জানানো হয়। সেই সাথে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিরাপদ বাসস্থান ও চাকুরীর নিরাপত্তার নিশ্চিত করার জোর দাবী জানানো হয়।।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাজমা আক্তার সভাপতি, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জনাব সিরাজুল ইসলাম রনি-সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগ, জনাব রুহুল আমিন- সভাপতি, বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশন, জনাব আবু ইউসুফ মোল্লা-সভাপতি, বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেস, জনাব হাসিনা আক্তার হাসি- সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি ফেডারেশন, আর এম জি ওয়ার্কার্স ফোরামের সভাপতি জনাব লিলি বেগম ও সাধারণ সম্পাদক জনাব উর্মি আক্তার সহ আরো অনেকে।